মুখের ব্রণ দূর করার উপায়

সবার প্রথম আমাদের চোখ যায় মুখের দিকে, তাই মুখ যদি সুন্দর হয় তবেই আপনি সুন্দর বলে বিবেচিত হবেন। কিন্তু মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করতে ব্রণ কমবেশি সবার জীবনেই হানা দেয়। এবং, মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করে আমাদের অসুন্দর বানিয়ে ফেলে। সাধারণত নিয়মিত পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখা, কম পানি পান করা, ভাঁজাপোড়া বা তেলজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া, রাতজাগা, দুশ্চিন্তা করা, মেকআপ ভালোভাবে না তোলা, রোদে পোঁড়া ইত্যাদি কাজগুলোর কারনে ব্রণ হয়ে থাকে। আমাদের আজকের আলোচনায় সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করে মুখের ব্রণ দূর করার উপায় সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।


এছাড়াও শ্যাম্পুর সময় যে এক্সট্রা শ্যাম্পু ত্বকে লেগে যায় সে কারণেও ব্রণ হয়,তাই শ্যাম্পু করার পর শুধু পানি দিয়ে মুখ ধুলে চলবে না, তৎক্ষনাৎ ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।

আবার দেখা যায় অনেকে বালিশের কভার নিয়ে অসচেতন। নিয়মিত বালিশের কভার ও বিছানার চাদর পরিষ্কার না করা, অপরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে মুখ মোছা ইত্যাদি কারনেও ব্রণ হয়ে থাকে।

ব্রণ স্বাধারনত বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনজনিত কারনে বেশি দেখা দেয়। তবে এটি ১২ বছরের পর থেকে ৪০ বছর বয়স অব্দি সবারই হতে পারে।

ব্রণ হলে যে বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে –


নিয়মিত সময় মতো মুখ ধোয়া (মুখের ব্রণ দূর করার প্রধান উপায়)

মুখ অপরিষ্কার থাকলে যেমন ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়, ঠিক তেমনি এর বিপরীতও হতে পারে। অর্থাৎ অতিরিক্ত মুখ ধোয়ার কারনে মুখ শুষ্ক হয়ে যায় এবং ব্রণ দেখা দেয়। তাই ৩ বারের বেশি কখনোই ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া উচিত না।

কোর্স পূরণ করা

অনেকে ডাক্তার দেখানোর পর ভালো ফলাফল না পেলে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন বা ব্রণ ভালো হতে শুরু করলে আর ঔষধ খান না। যার বিরুপ প্রভাব পরে ত্বকের উপর। তাই, অবশ্যই ডাক্তারের নিয়মাবলি অনুসরণ করবেন এবং যে ঔষধ দিবে সেগুলো সম্পূর্ণ কোর্স খাবেন। অর্থাৎ যতোদিনের জন্য ওষুধ দেয়া হবে ঠিক ততোদিন খেয়ে শেষ করবেন৷

বিশেষ সতর্কতাঃ ব্রণ কখনোই হাত দিয়ে ধরবেন না। ব্রণ কখনো ফাঁটাবেন না। ব্রণ ফাঁটালে সে জায়গায় ব্যাকটেরিয়া ও আরো জীবাণু প্রবেশ করে আরো বেশি ব্রণ সৃষ্টি করে। এ বিষয় সতর্ক থাকতে হবে।

অন্য কারো কথা শুনে মুখে যা তা ট্রাই করবেন না। সবার স্কিন টাইপ এক না। তো একজন একটা কিছু দিয়ে উপকৃত হলে সেটা দিয়ে আপনিও উপকৃত হবেন, এমন ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো কিছুই মুখে লাগাবেন না।

সাধারণত ঔষধ বা ব্রণের মলম ব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশংকা থাকে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে ঘরোয়া প্রাকৃতিক কিছু উপাদান দিয়েই কমাতে পারেন ব্রণ। আসুন জেনে নেওয়া যাক ব্রণ দূর করার কিছু সহজ ঘরোয়া প্যাক। যেগুলোর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে পারেন নিচের সহজ প্যাকগুলো-

মুখের ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে লেবুর ফেইসপ্যাক এর কার্যকারিতা

১। লেবুর গুনাবলির কথা নতুন করে আর কি বলব- এর বহুমুখী উপকারিতার কথা কম বেশি আমরা সবাই জানি। মুখের ব্রণ দূর করার উপায় বা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে লেবুর ফেসপ্যাক এর ভূমিকা কোনো অংশেই কম না। ব্রণ দূর করতে লেবুর কিছু অসাধারণ প্যাক নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

  • ১ চামচ লেবু ও আধ চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। অতঃপর দ্রবণটি তুলো বা কটন বারের সাহায্যে যেখানে যেখানে ব্রণ সে জায়গাগুলোতে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। প্যাকটি ১ দিন পর পর ব্যবহার করুন।
  • লেবুর রস ১ চামচ ও শশার রস ১ চামচ একত্রে মিশিয়ে নিতে হবে। দ্রবনটি তুলোর সাহায্যে ব্রণের জায়গায় লাগিয়ে নিন। ১৫ – ২০ মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলুন। এবার ব্রণের জায়গায় মধু লাগান। এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করা যায়। তবে সেনসেটিভ স্কিন হলে ১ দিন পরপর ব্যবহার করুন।
  • ২ – ৩ চামচ মুলতানি মাটি ১ চামচ লেবুর রস, ১ চামচ কমলা লেবুর রস, ১ চামচ মধু একত্রে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর, যেখানে যেখানে ব্রণ আছে সে জায়গায় লাগিয়ে নিন।
  • ২৫-৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। মুলতানি মাটি অতিরিক্ত তেল নিঃস্বরন করতে সাহায্য করে। অনেকটা বেশী ব্রণ থাকলে প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যাবে। এছাড়াও মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে ও ময়লা দূর করতে প্যাকটি দারুন কার্যকর। সেক্ষেত্রে শুধু ৩-৪ দিন পর পর ব্যবহার করতে পারেন।

মুখের ব্রণ দূর করার জন্য নিমের ব্যবহার পদ্ধতি

২। ৫ – ৬ টা নিমপাতা ব্লেন্ড করে নিন। উক্ত ব্লেন্ডের সাথে যোগ করুন ২ চামচ মুলতানি মাটি এবং পরিমাণ মতো গোলাপজল। উপকরণ গুলো ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে সারা মুখেও লাগাতে পারেন। নিমের ঔষুধি গুনাবলি ত্বকের জীবাণু দূর করতে সাহায্য করবে। প্যাকটি লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ সম্পূর্ণ না কমা পর্যন্ত ৩-৪ দিন পর পর ব্যবহার করুন।

ডিম, চন্দন গুড়ো ও তুলসি পাতার ফেইসপ্যাক

৩। ২ চামচ ডিমের সাদা অংশ ও ২ চামচ চন্দন গুড়ো ও আধ চামচ তুলসি পাতার রস একত্রে মিশিয়ে তৈরি করে নিন ব্রণ দূর করার জাদুকরী একটি প্যাক। প্যাকটি ২৫-৩০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।

ব্রণ নিয়ন্ত্রণে আপেল ও মধুর ফেইসপ্যাকের ব্যবহার

৪। ব্রণ দূর করতে সেই আদিকাল থেকে আপেল ও মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ৩ টুকরো আপেল ব্লেন্ড করে নিন। সাথে যোগ করুন ১ চামচ মধু। প্যাকটি ব্রণের জায়গায় লাগিয়ে আধ ঘন্টা অপেক্ষা করুন। আধঘন্টা পর হালকা গরম পানির সাহায্য ধুয়ে ফেলুন।

ব্রণে বরফ ব্যবহারের কার্যকারিতা

৫। বরফ ব্রণের আকার ছোট করতে সাহায্য করে। নিয়মিত বরফ ঘষলে ব্রণ কমতে থাকে। এছাড়াও ব্রণের কারনে ত্বক লালচে হয়ে গেলে সে লালচেভাব কমায়। পাতলা কাপড়ে ৩-৪ টুকরো বরফ নিয়ে ত্বকের উপর হালকা ঘষুন। ঘষার পর ব্রণের জায়গায় মধু লাগিয়ে নিন। এ পদ্ধতিটি নিয়মিত অনুসরণ করলে ব্রণ কমে আসে।

ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে চন্দনের ফেইসপ্যাক এর ব্যবহার

৬। চন্দনে জীবাণুনাশক উপাদান বিদ্যমান। চন্দন লোম কূপ ছোট করতে সাহায্য করে। যার ফলে লোমকূপ দিয়ে ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণু ঢুকতে পারে না। এবং, ব্রণের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। চন্দনের ফেইসপ্যাক বানাতে পরিমান মতো চন্দন, আধ চামচ কর্পূর ও দুধ একত্রে মিশিয়ে নিন। প্যাকটি ব্রণের স্থানে লাগিয়ে সারারাত রেখে দিন। সকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত প্যাকটি লাগালে ব্রণ দূর হবে।

অ্যালোভেরা ব্যবহার করে ব্রণ নিয়ন্ত্রণ

৭। অ্যালোভেরা অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে। ত্বকে পুষ্টি যোগায় ও ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে। এবং, ত্বকের বিষাক্ত উপাদানগুলো দূর করে। ব্রণ দূর করতে অ্যালোভেরার প্যাক কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।

এর জন্য তাজা অ্যালোভেরা খোসা ছাড়িয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। আধচামচ হলুদ, আধচামচ মধু, আধ চামচ দুধ, ৩ চামচ ব্লেন্ড করা অ্যালোভেরার সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন।

মুখের ব্রণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য টমেটোর ফেইসপ্যাক

৮। ব্রণ শুকাতে ও ত্বক উজ্জ্বল করতে টমেটো অদ্বিতীয়। টমেটোর সহজ একটি প্যাক দূর করতে পারে ব্রণ। এর জন্য খাঁটি অ্যালোভেরা জেল ২ চামচ, ১ চামচ টমেটোর রস ও ২-৩ চিমটি হলুদ একত্রে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ২০-২৫ মিনিট লাগিয়ে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্যাকটি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন।

স্যালিসিলিক এসিড ব্যবহার করে ঘরোয়া পরিবেশে ব্রণ নিয়ন্ত্রণ

৯। স্যালিসিলিক এসিড ব্রণের জীবাণুকে মেরে ফেলে। আর শরিষাতে স্যালিস্যালিকের পরিমান খুবই বেশি। শরিষার তেল ও মধু সামান্য পরিমানে মিশিয়ে ব্রণের জায়গায় লাগান। ২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ব্রণ দূর করার পাশাপাশি ব্রণের দাগও দূর করে থাকে।

মুখের ব্রণ দূর করার ক্ষেত্রে টক দইয়ের ফেইসপ্যাক ব্যবহার পদ্ধতি

১০। ব্রণমুক্ত ত্বক পেতে, ত্বক পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত রাখা আবশ্যক। কর্মময় জীবনে প্রতিদিনই এখানে সেখানে ছুটতে হয়। আমাদের ত্বকের যত্ন নেওয়ার সময় কোথায়? সবসময় ডিপ ক্লিঞ্জার দিয়ে মুখ ধোয়া হয় না। যার ফলস্বরূপ জীবাণুতে ভরপুর মুখটা ব্রণে ভরপুর হতে খুব বেশি সময় লাগে না।

এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে অর্থাৎ ত্বককে পরিষ্কার করতে টক দইয়ের প্যাক কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। এক কাপ দই নিয়ে তাতে ১ চামচ মধু ও ১ চামচ অ্যালোভেরা ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মুখ ধুয়ে প্যাকটি লাগিয়ে ২৫-৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরবর্তীতে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

দইয়ে থাকা ল্যাকটিক এসিড ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের যাবতীয় জীবাণু দূর করে ত্বককে করে তোলে পরিষ্কার ও কোমল।

ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপাদানগুলো খুবই কার্যকর। নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণ থেকে পরিত্রান পেতে পারেন। এছাড়াও সবুজ শাকসবজি ও মৌসুমি ফল বেশি বেশি করে খেতে হবে।

ব্রণের চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাইলে বেশি বেশি পানি পান করার কথা সবাই, সব জায়গায়ই বলে থাকে। কিন্তু সেটাতে আমরা অবহেলা করি। অবশ্যই বেশি করে পানি পান করতে হবে। সেটা কষ্টকর হলে, সামান্য চিনি দিয়ে লেবুর শরবত বানিয়ে খাবেন।

অর্থাৎ, ব্রণ কমাতে পরিমাণ মতো পানি পান করতেই হবে। এর গুরুত্ব অপরিসীম। তাই কোনভাবেই নিয়মিত পরিমান মত পানি পান করার বিষয়টি হেলাফেলা করে ভুলে থাকা উচিত হবে না।

Leave a Comment