অ্যামাজন এবং ই-কমার্স প্রায় সমার্থক শব্দ। অনলাইন বাণিজ্যের যে আধুনিক রূপটি আমরা দেখতে পাই সেটি অ্যামাজনেরই সৃষ্টি। অ্যামাজন ডট কমকেই আমরা অ্যামাজন হিসেবে চিনি। এটি একটি আমেরিকান কোম্পানী। অনলাইন বাণিজ্য এবং ক্লাউড কম্পিউটিং অ্যামাজনের প্রধান দুই সেবা। ১৯৯৪ সালের জুলাই মাসের ৫ তারিখ অ্যামাজন যাত্রা শুরু করে। এর নির্মাতা বিশ্ববিখ্যাত জেফ বেযোস। এই কোম্পানীর বদৌলতে তিনি পৃথিবীর শীর্ষতম ধনীদের একজন।
মোট বিক্রয় এবং বাজারে অংশীদারিত্বের বিচার করলে অ্যামাজন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট ভিত্তিক দোকান। অ্যামাজন শুরুটা করেছিল অনলাইন বুকস্টোর হিসেবে। পরিসরে আরেকটু বৃদ্ধি পাওয়ার পর ডিভিডি, অডিওবুক, ভিডিও গেমস, ফার্নিচার, খাবার, গহনা, সিডি সহ বহুবিধ পণ্য বিক্রী শুরু করে অ্যামাজন। অ্যামাজন নিজস্ব পণ্যও তৈরি করে। কিন্ডেল ইবুক রিডার, ফায়ার ট্যাবলেট, ফায়ার টিভি, অ্যামাজন ইকো – এগুলি অ্যামাজনের নিজস্ব পণ্য। ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা প্রদানের দিক থেকে অ্যামাজন পৃথিবীর বৃহত্তম কোম্পানী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মার্কিন যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, মেক্সিকো, ইটালি, স্পেন, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রাজিল এবং ভারতের জন্য পৃথক পৃথক খুচরা-বিক্রয়ের ওয়েবসাইট রয়েছে অ্যামাজনের। কিছু কিছু পণ্যের জন্য অ্যামাজন কিছু দেশকে আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনের সেবা দিয়ে থাকে। অ্যামাজন ওয়েবসাইটের ডাচ, পোলিশ, টার্কিস সংস্করণ বের হয় ২০১৬ সালে।
অ্যামাজনের জনপ্রিয়তা
অ্যামাজন ব্যবহার করে অনলাইনে ব্যবসা করার অন্যতম একটি কারণ হতে পারে এই কোম্পানীর জনপ্রিয়তা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় কেনাকাটার অ্যাপ অ্যামাজন। ২০১৯ সালের এক সেপ্টেম্বর মাসেই, ১৫০.৬ মিলিয়ান মোবাইল ব্যাবহারকারী অ্যমাজন অ্যাপে কিছু একটা কেনার জন্য ঢুকেছেন।
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হল অ্যামাজন তার অন্য প্রতিদ্বন্দীদের চেয়ে অনেক বেশী অগ্রসর। অনলাইন কেনাকাটার অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মধ্যে অ্যামাজনের পরেই আছে “ওয়ালমার্ট”। ওয়ালমার্টের মোবাইল অ্যাপটির ব্যবহারকারী মাসে মাত্র ৭৬.৪৫ মিলিয়ন!
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশী বার ভিজিট করা খুচরা বিক্রয়ের সাইট অ্যামাজন। প্রতি মাসে শুধুমাত্র মোবাইল থেকেই প্রায় তেষট্টি মিলিয়ানের বেশী মানুষ অ্যামাজনের বিভিন্ন সাইট ভিজিট করে থাকে। সেই হিসেবে, শুধু মোবাইল ব্যবহার করে অনলাইনে আসেন এমন মানুষদের মাঝে অ্যামাজন সবচেয়ে জনপ্রিয়।
অ্যামাজনের ওপর গ্রাহকদের আস্থা সবচেয়ে বেশী। এই বিষয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। দুই হাজারের বেশী মার্কিন ভোক্তাকে জিজ্ঞেস করলে, তাদের মাঝে ৮৯ ভাগ ক্রেতাই জানালেন যে অন্য যেকোন ইকমার্স সাইটের তুলনায় অ্যামাজন থেকে পণ্য কিনতেই তারা বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। পৃথিবীর সমস্ত অনলাইন বাণিজ্য যে প্রত্যক্ষ কি পরোক্ষভাবে অ্যামাজনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় সেটি বলাই বাহুল্য। যারা নিয়মিত অনলাইনে পণ্য কেনেন, সেই ক্রেতাদের সাপেক্ষে এটি খুব বেশীই সত্য।
অ্যামাজনে প্রতিদিনই কিছু না কিছু কেনেন এমন ক্রেতাদের মাঝে ৯৮ শতাংশ, এবং সপ্তাহে কয়েকবার পণ্য কেনেন এমন ক্রেতাদের ৯৯ শতাংশই স্বীকার করবেন যে অ্যামাজনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় অ্যামজনের ওপরই তাদের আস্থা বেশী। এই আস্থা অ্যামাজন তাদের নিরবচ্ছিন্ন সেবার মাধ্যমে অর্জন করে নিয়েছে।
অ্যামাজনের প্রক্রিয়ায় কোন অস্বচ্ছতা নেই। ক্রেতা সবসময়ই জানেন কিসের মাঝে জড়াচ্ছেন। অনলাইনে যেহেতু পণ্য না দেখেই কিনতে হয়, সেক্ষেত্রে আস্থা, বিশ্বাস, স্বচ্ছতা এগুলো জরুরী বিষয়। এবং অ্যামাজন এই ক্ষেত্রগুলোতে খুবই সফল।
অ্যামাজনের পেইড সাবক্রিপশান ভিত্তিক একটি সেবা – অ্যামাজন প্রাইম। ২০০৫ সালে এই প্রোগ্রামটি চালু হয়। অ্যামাজন প্রাইমের সদস্যরা বিশেষ কিছু সেবা পেয়ে থাকেন। যেমন বিনামূল্যে দু-দিনের মাঝে পণ্য ডেলিভারী, বা দ্রুততর ডেলিভারী, মিউজিক এবং ভিডিও স্ট্রিমিং, এবং অন্যান্য আরও অনেক সুযোগ সুবিধা।
অ্যামাজন প্রাইমের ক্রেতাদের মাঝে জনপ্রিয় পণ্যগুলো মূলতঃ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রী, গৃহস্থালী ও সাংসারিক কাজের জিনিসপত্র। অ্যামাজন প্রাইমের সদস্যরা, সদস্য নয় এমন ক্রেতাদের তুলনায় অনেক বেশী সম্পৃক্ত থাকেন অ্যামাজনের সাথে।
অতি সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ পার্সেন্ট অ্যামাজন প্রাইম সদস্য জানিয়েছেন যে, সপ্তাহে কয়েকবার তারা অ্যামাজনে কেনাকাটা করে থাকেন। তার মাঝে সাত শতাংশ সদস্য জানাচ্ছেন প্রতিদিনই কিছু না কিছু কিনে থাকেন অ্যামাজন থেকে।
অ্যামাজন এফবিএ (ফুলফিলমেন্ট বাই অ্যামাজন)
অনলাইন বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশী মুনাফা করে থাকে অ্যামাজন। যে কারণেই অ্যামাজন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইকমার্স কোম্পানী। ইকমার্সের অনেকগুলো ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করেছে অ্যামাজন। অ্যামাজন এফবিএ (Amazon FBA) এই কোম্পানীটির এরকম বিনিয়োগ গুলোর একটি।
অ্যামাজন এফবিএর পূর্ণরূপ ফুলফিলমেন্ট বাই অ্যামাজন। এটি অ্যামাজন কোম্পানীরই একটি সার্ভিস। এর মাধ্যমে অ্যামাজন একজন “সেলার” বা বিক্রেতার পণ্যকে সংরক্ষণ, প্যাকেজিং এবং পরিবহনে সহযোগিতা করে থাকে।
ড্রপশিপিংয়ের সাথে এর যথেষ্টই পার্থক্য আছে। ড্রপশিপিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি আপনার বিক্রীত পণ্যের মালিকানা রাখেন না। কিন্তু অ্যামাজন এফবিএ-র ক্ষেত্রে সেলার বা বিক্রেতা বিনিয়োগ করবেন। অর্থাৎ পণ্য কিনবেন। সেই পণ্য অ্যামাজন তাদের ওয়ারহাউজে জমা রাখবে। আপনার পণ্য প্যাকিং করে ও ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয়ার সম্পূর্ণ দ্বায়িত্ব অ্যামাজনের।
এখানে আপনার লাভগুলো হচ্ছে –
১। একটু আগেই আলোচনা করেছি, যারা অনলাইনে কেনাকাটা করেন, অ্যামাজনের প্রতি তাদের কিরকম বিপুল আস্থা। আপনি যখন অ্যামাজন এফবিএ ব্যবহার করে আপনার পণ্য বিক্রী করবেন, তখন শুধু অ্যামাজন আপনার সাথে যুক্ত আছে এই মর্মেই ক্রেতাদের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যাবে। ক্রেতাদের একটি ধারণা তৈরী হবে যে, যেহেতু অ্যামাজন আপনার সাথে যুক্ত সুতরাং অবশ্যই ভাল কিছু পাবেন তারা আপনার কাছ থেকে।
২। ড্রপশিপিং নিয়ে আগে এই ব্লগে আলোচনা করেছিলাম। সেখানে খেয়াল করবেন, একজন ড্রপশিপারকে কিন্তু পণ্যের ব্যবস্থাপনা, পরিবহন, ক্রেতার কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা তৈরী নিয়ে অনেক বেশী ভাবতে হয়। কারণ ড্রপশিপার এই প্রতিটি কাজই নিজে সামলান।
পড়ুন-
ড্রপশিপিংয়ের প্রধান আকর্ষণ অতি কম পুঁজি ও ঝুঁকিতে ব্যবসা করা। কিন্তু পার্শ্বক্রিয়া হিসেবে এসব একশ একটা ঝামেলা সামলাতে হয় ড্রপশিপারকে।
আপনি অ্যামাজন ফুলফিলমেন্ট ব্যবহার করলে এই প্রতিটা ধাপের দ্বায়িত্ব অ্যামাজন কোম্পানীর। আপনি বিশাল একটি ভার বহন থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন।
৩। সাপ্লাইয়ার, শিপিং কোম্পানী এরকম কোম্পানীগুলোর সাথে অ্যামাজন ব্যবসায়িক সুসম্পর্কে যুক্ত। ফলে অ্যামাজন এফবিএ ব্যবহার করলে এসব জায়গায় আপনার খরচটা কম হবে। বিশেষ করে পণ্য ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে অ্যামাজন এফবিএ অনেক বেশী নিশ্চিত একটি ব্যবস্থা।
অ্যামাজন এফবিএ’তে কাজ শুরু করার সময় হাতে কিছু টাকা পয়সা থাকলে ভালো। কারণ অ্যামাজনের বিভিন্ন সার্ভিসগুলো ব্যবহার করলে কিছু টাকা আপনার খরচ হবেই।
অ্যামাজন এফবিএ (Amazon FBA) ব্যবসার খরচ
ফুলফিলমেন্ট বাই অ্যামাজন ব্যবহার করলে আপনার খরচ দুই রকমঃ
- আপনার পণ্য বিক্রয় হলে সেই বিক্রয়মূল্যের প্রায় পনের শতাংশ অ্যামাজন নিয়ে নিবে।
- তাছাড়াও স্টোরেজ, পরিবহন এবং অন্যান্য ব্যবস্থাপনার জন্যও ফি দিতে হবে অ্যামাজনকে।
এখানে অনেকেই, বিশেষ করে যারা নতুন ব্যবসা শুরু করার ভাবছেন, চিন্তা করবেন যে – তাহলে তো ড্রপশিপিংই ভালো। কারণ নতুনদের পরিশ্রম করতে, বা ঝামেলা পোহাতে অনাগ্রহ থাকে। কিন্তু এত ধরণের ফি পরিশোধ করার অবস্থায় অনেকেই এই মুহুর্তে নেই। তো এটাও ঠিক; ভালো মন্দ দুটোরই আছে।
তবে বিনিয়োগ সক্ষম ব্যবসায়ীরা ভেবে দেখুন যে, ড্রপশিপিংয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে পণ্য বিক্রয়ের জন্য প্রথমে নিজের ক্রেতা তৈরী করতে নিতে হবে। অ্যামাজন এফবিএ ব্যবহার করলে এই প্রথম ধাপটি এমনিতেই সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে।
অ্যামাজনের একটি বিশাল ক্রেতা সমাজ আছে। তারা সেই সমাজে আপনাকে প্রবেশাধিকার দিবে কোম্পানীর সার্ভিস ব্যবহার করলে। এবং অ্যামাজনের ব্র্যান্ডগুণে আপনি পণ্য বেশী দামে বিক্রী করে মুনাফাও করতে পারবেন বেশী।
এখন, ব্যাক্তিগত অভিরুচিগুলো একেক রকম হয়। অনেক উদ্যোক্তাই নিজের ব্র্যান্ড শুরু করার সময় অন্য একটি অনেক দানবীয় ব্র্যান্ডের অংশ হতে চাইবেন না। কারণ ব্র্যান্ড হিসেবে আপনার ক্ষুদ্রতা এখানে স্পষ্ট থাকবে সবসময়। এধরণের ইগোর ব্যাপার থাকলে, আপনার জন্য ড্রপশিপিংই ভালো।
তবে যারা এভাবে ভাবেন না, তাদের জন্য অ্যামাজন এফবিএ খুব লাভজনক একটি ব্যাবসায়িক মডেল। অ্যামাজন এফবিএ থেকে পন্য প্রতি মুনাফা অনেক বেশী করা যায়। এবং অ্যামাজনের অনেক ধরণের শাখা কার্যক্রমের মাধ্যমেও আপনি বাড়তি টাকা উপার্জন করতে পারবেন। তাতে আপনার ব্যবসাটির মোট আয়ের সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পেল।
কিভাবে শুরু করবেন আপনার অ্যামাজন এফবিএ’র ব্যবসা
নিশে নির্ধারণ ও একাউন্ট তৈরীঃ অ্যামাজন এফবিএ’র মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করার আগে প্রথমেই আপনার “নিশে” ঠিক করুন। অর্থাৎ কীসের ব্যবসা করতে চান আপনি। এরপরের কাজ একাউন্ট তৈরী করা। এক্ষেত্রে প্রথম ধাপটি হচ্ছে, অ্যামাজনে আপনাকে “সেলার একাউন্ট” খুলতে হবে।
আপনি দু’ধরণের একাউন্ট খুলতে পারেন – প্রফেশানাল একাউন্ট এবং ইনডিভিজুয়াল একাউন্ট। ইনডিভিজুয়াল একাউন্টের জন্য কোন মাসিক সাবক্রিপশানের দরকার হয় না। তবে এক্ষেত্রে আপনার একাউন্টের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকবে।
নিশে ঠিক করার ব্যাপারটা এখানে ড্রপশিপিংয়ের মতই। এমন কিছু নিয়ে কাজ করুন যেই বিষয়ে আপনার আগ্রহ আছে। আপনার আগ্রহের বিষয় একাধিক হলে, মূল একটি বিষয়ের পাশাপাশি বাকীগুলোকেও সচল রাখুন। একটি বিফল হলে আপনি অন্য আরেকটি দিয়ে সফল হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। যে বিষয় নিয়ে ব্যবসা করছেন, সেই সমন্ধে জ্ঞানের পরিধি বাড়ান। গবেষণা করুন। আপনার ব্যাবসায়িক কার্যক্রমের পরিণাম তাহলে আন্দাজ করতে পারবেন সহজে।
অ্যামাজন এফবিএ প্লাটফর্মে কি কি পণ্য বিক্রী করবেন
এরপর ঠিক করুন কি পণ্য আপনি বিক্রী করতে চান। এজন্য কিওয়ার্ড টুলসগুলোর সাহায্য নিতে পারেন। কিওয়ার্ড টুলস ব্যবহার করে দেখুন যে- কোন ধরণের পণ্যের জন্য মানুষ সবচেয়ে বেশী সার্চ করে ইন্টারনেটে। অথবা আপনি যে পণ্যটি বিক্রী করার কথা ভাবছেন সেটির কিরকম চাহিদা রয়েছে ইন্টারনেটে কেনা-কাটা করা মানুষদের কাছে।
অ্যামাজন এফবিএ-তে একেক রকম পণ্যের একেক রকম ফি। পণ্যের ওজন, আকার, সংরক্ষণের ব্যাবস্থা এই বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝে নিবেন। যদি খরচ কমাতে চান, তাহলে এমন পণ্য নিন যার সাথে সংশ্লিষ্ট ফি এর পরিমাণ কম।
কম প্রতিযোগিতা করতে হয়, এমন পণ্য বিক্রী করার চেষ্টা করুন। কিছু নির্দিষ্ট পণ্য আছে যেগুলো বাজারে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলোর বাইরে মানুষ কখনই অনলাইনে কিনবেন না। সুতরাং, অ্যামাজন এফবিএ’র ব্যবসায় খামোখা এসব পণ্য বিক্রী না করতে যাওয়াই ভালো।
পণ্যের উৎস
আপনার ব্যাবসার মূল পণ্যগুলো নির্ধারণ করা শেষ। এখন কোথা থেকে পণ্য পাবেন সেটা দেখতে হবে। আপনি এমন সাপ্লাইয়ার খুঁজবেন যেখান থেকে উন্নত মানের পণ্য পাওয়া যায়। অনলাইনে কেউ দেখতে পাচ্ছে না বলে আপনি যদি নিম্নমানের পণ্য দিয়ে চালিয়ে দিতে চান, তাহলে কোনভাবেই ব্যবসা করে টিকতে পারবেন না।
আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা দেশীয় প্রস্তুতকারকদের থেকেই পণ্য নিতে পারেন। আমাদের দেশে শ্রমিক খরচ খুব কম হওয়ায়, বিদেশী স্বনামধন্য ব্যবসায়ীরাও এদেশের প্রস্তুতকারকদের থেকে পণ্য নিয়ে থাকেন। পরে অনলাইনে সেই পণ্য বিক্রী করে খুব বড় ধরণের মুনাফা করতে পারেন তারা। সুতরাং, আমাদের দেশের প্রস্তুতকারকদের ওপর ভরসা করতে পারেন।
তবে যার থেকেই পণ্য নিন না কেন, আপনার নিজের ব্যবসার খাতিরে সবসময়ই পণ্য পরীক্ষা করে দেখবেন। প্রথমে কিছু স্যাম্পল (নমুনা) নিন। পণ্যটি নিজে ব্যবহার করুন। আপনি সন্তুষ্ট হলে তবেই সেই পণ্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রী করুন।
এর পরের ধাপ আপনার পণ্যগুলো অ্যামাজন ফুলফিলমেন্ট সেন্টারে পাঠানো। এই প্রক্রিয়াটির সময়, অ্যামাজন আপনাকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিবে। সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
আপনার ব্র্যান্ড তৈরী করুন
এখন আপনার পণ্য বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত। এখন আপনাকে নিজের ব্র্যান্ড তৈরী করতে হবে। আপনার ব্র্যান্ড হচ্ছে ক্রেতার কাছে আপনার পরিচয়। ব্র্যান্ডের নামটি গবেষণা করে নিন। ইতিমধ্যেই ব্যবহার করছেন কি না কেউ এই নাম সেটি নিশ্চিত হওয়া জরুরী। যে ডোমেইন ব্যবহার করবেন সেই বিষয়েও এভাবে নিশ্চিত হয়ে নিবেন। ডোমেইন বলতে আপনার ওয়েবসাইটের নাম। এই ওয়েবসাইট আপনার মূল ঠিকানা। অ্যামাজনের বাইরে এই ওয়েবসাইট দিয়েই ক্রেতাদের সাথে সংযোগ তৈরী হবে আপনার।
অ্যামাজনের ফুলফিলমেন্ট সার্ভিস করার কারণে এমনিতে আপনার ব্র্যান্ডকে ভরসাযোগ্য মনে হবে ক্রেতাদের কাছে। কিন্তু সে জন্য ব্র্যান্ড নির্মাণের কাজটি দায়সারা ভাবে করবেন না। কারণ দীর্ঘ পরিক্রমায় নিজের ব্র্যান্ডের পরিচয় তো তৈরী করতে হবেই আপনাকে। সুতরাং শুরুটা ভালোভাবে হওয়া দরকার।
মনে রাখবেন একটি ব্র্যান্ডের মূল জিনিস হচ্ছে-
- তার নাম।
- ট্যাগলাইন।
- লোগো।
- ব্র্যান্ডের পটভূমিতে থাকা আখ্যান।
এর মধ্যে আপনার পণ্য কি এবং কিভাবে সেই পণ্যকে আপনি মানুষের কাছে উপস্থাপন করছেন, এই বিষয়টিও আসবে।
প্রোডাক্ট পেজ
আপনার পণ্যের জন্য প্রোডাক্ট পেজ তৈরী করুন। প্রোডাক্টের পূঙ্খানুপূঙ্খ বিবরণ দিবেন। বিবরণ লেখার সময় ভাষাগত, ব্যাকরণগত ভুল করবেন না। তাতে আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি সংশয় তৈরী হবে মানুষের। পণ্যের ছবি বা প্রোডাক্ট ফটোগুলো যেন পেশাদার হয়। পণ্যটি যেন আকর্ষণীয় দেখায়। তার গুণাগুণগুলো স্পষ্ট বোঝা যাওয়া দরকার ছবিতে।
অন্য ব্র্যান্ডগুলো কি করছে সেদিকেও লক্ষ্য করুন। কিভাবে বিক্রী করছেন তারা নিজেদের পণ্য সেখান থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারেন। খেয়াল রাখবেন, আপনার বিবরণ প্রদানের সুরটি যেন বন্ধুবৎসল হয়। আপনার সম্ভাব্য ক্রেতাদের যেন আকর্ষণ করতে পারে।
আপনি পণ্য বিক্রীর উদ্দেশ্যেই লিখবেন। কিন্তু আপনার বিক্রীর ইচ্ছেটি যেন প্রকট বা স্থূলভাবে প্রকাশিত না হয়। এমনভাবে লিখুন যেন ক্রেতার মনে হয় এই পণ্য তাকে কিনতে হবেই। যথেষ্ট আবেগ ও অভিব্যাক্তি বহুল করুন আপনার লেখাটিকে। যেই প্যারাগ্রাফই ব্যবহার করবেন সেটি যেন গোছানো হয়। পাঠক বা আপনার ক্রেতা যেন পড়ে আরাম পান।
এই বিবরণ বা প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশানটির মূল লক্ষ্য- পণ্যটিকে বিক্রয় এবং ক্রেতার মন থেকে আপনার পণ্য ক্রয় বিষয়ক সকল সংশয়কে দূর করা।
মার্কেটিং
ওপরের ধাপগুলো শেষ করে আসলে আপনার অ্যামাজন এফবিএ ব্যবসা এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এবার আপনাকে মার্কেটিং করতে হবে। এখানেও ব্যাপারটা ড্রপশিপিংয়ের মত। সঠিক বিজ্ঞাপন ও প্রচারণাই মূল বিষয়। এই কাজ দুটো ঠিক ভাবে করতে পারলেই আপনার ব্যবসা পূর্ণ প্রতাপে চালু হয়ে যাবে। পণ্য বিক্রী থেকে টাকাও আনতে পারবেন।
এই ক্ষেত্রটিতে আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু সামাজিক গণমাধ্যম। আপনার ব্র্যান্ডের প্রোফাইলকে আকর্ষণীয় করে তুলুন। মানুষ যেন ভিউ, লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারে আগ্রহী হয়। নিয়মিত পোস্ট দিন। ক্রেতাদের মেসেজের উত্তর দিন যথাসম্ভব দ্রুত সময়ে। এভাবে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠবে আপনার।
তবে মার্কেটিংয়ের অনেকগুলো পথ একসাথে ধরতে যাবেন না। খুব বেশী হলে দুই কি তিনটে প্লাটফর্ম বেছে নিয়ে মার্কেটিং করতে পারেন শুরুতে। সেই প্লাটফর্মটি থেকে লাভ আসা শুরু হলে, এবং সেটিকে প্রতিষ্ঠিত করার পর, অন্যগুলোতে যেতে পারেন।
এই জায়গায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্যমান বিভিন্ন “ইনফ্লুয়েন্সার” ব্যক্তিত্বদের কাজে লাগাতে পারেন। টাকা দিলেই এসব লোক আপনার পণ্য নিয়ে ভালো ভালো কথা বলবেন। অনেককে টাকাও দিতে হবে না, পণ্য দিলেই হবে। ইনফ্লুয়েন্সাররা আপনার পণ্যের বিক্রীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
এর বাদেও যেটা করতে পারেন, আপনার ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে বিভিন্ন প্লাটফর্ম যুক্ত করতে পারেন, যেগুলোতে গিয়ে ক্লায়েন্টরা আপনার পণ্যের ও সেবার রিভিউ দিতে পারবেন। একটি ভাল রিভিউয়ের গুরুত্ব অনেক। ভালো রিভিউ আপনার জন্য ভবিষ্যত ক্রেতা তৈরী করবে।
আপনার বিদ্যমান এবং সম্ভাব্য ক্রেতাদের ইমেইল সাবক্রিপশানে উদ্বুদ্ধ করুন। আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও ক্রেতাদের সাবক্রিপশানের জন্য সাইন আপ করানোর উপায় খুঁজতে পারেন। কিন্তু কিছু নিয়েই বাড়াবাড়ি করতে যাবেন না।
বিএসআর
বি-এস-আর অর্থাৎ বেস্ট সেলার্স রেংক। সবসময়ই চেষ্টা করুন এই র্যাঙ্কিংটি আরও উন্নত করার। বেস্ট সেলার্স র্যাঙ্ক কি জিনিস সেটি নাম শুনেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। আপনার ব্যবসার বিএসআর নিরবচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে ক্লায়েন্টরা বুঝবেন যে, আপনার ব্যবসাটি নিশ্চিতভাবেই একটি সফল ব্যবসায় পরিণত হতে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আপনার পণ্যের ওপর তারা ভরসা করতে পারবেন।
আবারও বলছি, অনলাইনে যেহেতু না দেখেই পণ্য কিনতে হয়, সুতরাং এই আস্থা, ভরসা, বিশ্বাসের বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যামাজন একটি বিশাল ব্র্যান্ড। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ব্যবসায়িক টুলসও আবিষ্কার করে চলেছেন তারা। তাই, যেকোন আধুনিক ব্যবসায়ীই ফুলফিলমেন্ট অ্যামাজন ব্যাবহার করে যথেষ্ট লাভবান হতে পারেন।
সম্পাদকের বাছাই –